বিপ্লবের নির্দেশনা দেখতে নিচের লিঙ্কটি ক্লিক করুন

রবিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০০৯

ইসলামী আইনে উত্তরাধীকারী সম্পদে একজন নারীর অংশ একজন পুরুষের অর্ধেক কেন?



ইসলামী আইনে উত্তরাধীকারী সম্পদে একজন নারীর অংশ একজন পুরুষের অর্ধেক কেন?

জবাব

ক. কুরআনে উত্তরাধিকার

যথাযোগ্য প্রাপকের মধ্যে উত্তরাধিকারী সম্পদ বন্টনের সুনির্দিষ্ট এবং বিস্তারিত নির্দেশনা জ্যোতীর্ময় কুরআনে বিধৃত আছে

উত্তরাধিকার সংক্রান্ত কুরআনে আয়াত সমূহঃ

সূরা বাকারাঃ ১৮০
সূরা বাকারাঃ ২৪০
সূরা নিসাঃ ৭-৯
সূরা নিসাঃ ১৯
সূরা নিসাঃ ৩৩
সূরা মায়েদাহঃ ১০৬-১০৮

খ. আত্মীয় স্বজনের জন্য উত্তরাধিকারের সুনির্দিষ্ট অংশ

কুরআনের তিনখানি আয়াতে বিস্তারিতভাবে নিকটাত্মীয়দের অংশ বর্ননা করা হয়েছে

তোমাদের সন্তানদের ব্যাপারে আল্লাহ তোমাদেরকে এই বিধান দিচ্ছেনঃ পুরুষের অংশ দুই নারীর সমান হবে (উত্তরাধিকারী) যদি দুই জনের বেশি নারী হয় তাহলে সম্পদের দুই তৃতীয়াংশ দেয়া হবে আর একজন নারী হলে মোট সম্পদে অর্ধেক পাবে আর সে যদি নিঃসন্তান হয় পিতা-মাতাই হয় উত্তরাধিকারী তাহলে মাকে দেয়া হবে তিন ভাগের এক ভাগ মৃতের ভাই বোন থাকলে মা সেই ছয় ভাগের এক ভাগই পাবে মৃত ব্যক্তির সন্তান থাকলে তার পিতা-মাতা প্রত্যেক ছয় ভাগের এক ভাগ করে পাবে এসব বণ্টন মৃতের কোনো অসীয়ত থাকলে তা এবং ঋণ থাকলে তা আদায় করার পরে

তোমাদের পিতা-মাতা এবং তোমাদের সন্তান-সন্ততী, তোমাদের জানা নাই এদের মধ্যে তোমাদের কল্যাণের দিক দিয়ে কারা ঘনিষ্ঠতর এই বণ্টন ব্যবস্থা ফরয করে দেয়া হয়েছে (তোমাদের জন্য) আল্লাহর পক্ষ থেকে আল্লাহ তো সব কিছুর ব্যাপারেই পূর্ণ অবহিত এবং মহামহীম জ্ঞানের আধার আর তোমাদের স্ত্রীরা যা কিছু রেখে গেছে, তার অর্ধেক তোমরা পাবে যদি তারা নিঃসন্তান হয় সন্তান থাকলে তোমরা পাবে ত্যাক্ত সম্পত্তির চারভাগের এক ভাগ- তাদের করে যাওয়া অসীয়ত এবং দেনা থাকলে তা সব আদায়ের পরে আর (তোমরা মরে গেলে) তোমাদের রেখে যাওয়া সম্পদের তারা পাবে চার ভাগের একভাগ যদি তোমাদের কোনো সন্তান না থাকে সন্তান থাকলে তারা পাবে আট ভাগের একভাগ তা-ও কার্যকর হবে তোমাদের কোনো অসীয়ত এবং দেনা থাকলে তা আদায়ের পর

আর যদি এমন কোনো পুরুষ অথবা স্ত্রীলোক (সম্পদ রেখে মারা যায়) যার না আছে কোনো সন্তান আর না আছে পিতা-মাতা আর ভাই বোন যদি দুই এর বেশি হয় তাহলে তারা সবাই মিলে মোট সম্পদের তিন ভাগের একভাগ পাবে তা-ও কোনো অসীয়ত এবং ঋণ থাকলে তা আদায়ের পরে কোনো ভাবেই কারো কোনো ক্ষতি করা বা হতে দেয়া যাবে না (এসব কিছু) আল্লাহর দেয়া উপদেশ মালা (সূরা নিসাঃ ১১-১২) আছে এক ভাই অথবা এক বোন তাহলে তাদের প্রত্যেক (কোনো পার্থক্য ছাড়া) পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ আর আল্লাহ সব কিছুর ব্যাপারেই পূর্ণ অবহিত এবং পরম ধৈর্য্যশীল


তারা আপনার কাছে ফতোয়া জানতে চায় বলুন, আল্লাহ তোমাদেরকে ফতোয়া দিচ্ছেন- নিঃসন্তান ও পিতৃ-মাতৃহীন মৃত ব্যক্তির সম্পদ বণ্টন সম্পর্কে যদি এমন ব্যক্তি মারা যায়, যার কোনো সন্তান নেই, আছে এক বোন তাহলে সে (বোন) পাবে সম্পদের অর্ধেক আর যদি (এরকম কোনো) বোন মারা যায় তাহলে ভাই পুরো সম্পদের উত্তরাধিকারী হবে মৃতের উত্তরাধীকারী যদি দুই বোন হয় তাহলে ত্যাক্ত সম্পত্তির তিন ভাগের দুই ভাগের দুই ভাগ তারা পাবে আর যদি কয়েকজন ভাই বোন হয় তাহলে পুরুষের অংশ নারীর অংশের দু’জনার সমান

আল্লাহ (এই সব জটিল বিষয়গুলো খুলে) স্পষ্ট করে দিচ্ছেন তোমাদের জন্য যেন তোমরা বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে না যাও প্রত্যেকটি জিনিস সম্পর্কেই আল্লাহ পূর্ণ অবহিত (সূরা নিসাঃ১৭৬)

গ. প্রতিপক্ষ পুরুষের তুলনায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারী সমান অথবা বেশির অধিকারী হয়

অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারী অধিকারী হয় প্রতিপক্ষ পুরুষের অর্ধেক যাই হোক এটা কিন্তু সর্বক্ষেত্রে নয় মৃত ব্যক্তি এমন, যার পিতা-মাতও নেই, পুত্র কন্যাও নেই আছে বৈপিত্রীয় ভাই ও বোন এদের প্রত্যেকে এক ষষ্টমাংশ করে পাবে

মৃতের পুত্র কন্যা থাকলে মাত-পিতা উভয়ে এক ষষ্টমাংশ করে পাবে ক্ষেত্র বিশেষে নারী উত্তরাধিকার হয় পুরুষে দ্বিগুন মৃত যদি একজন নারী হয় যার না কোনো সন্তান আছে ভাই বোন, আছে স্বামী এবং মা ও বাবা এখানে মৃত্যের স্বামী পাবে অর্ধেক সম্পদ এবং পাবে এক তৃতীয়াংশ বাবা পাবে এক ষষ্টমাংশ বিশেষ এই ক্ষেত্রটিতে বাবার তুলনায় মা দ্বিগুন পাচ্ছে

ঘ. নারী সাধারণত পুরুষের অর্ধেক অংশের উত্তরাধিকারী হয়

১. পুত্র যতটুকু উত্তরাধিকারী হয় কন্যা তার অর্ধেক
২. মৃতের কোনো সন্তান না-থাকলে স্বামী চারের এক অংশ এবং স্ত্রী আটের এক অংশ
৩. মৃতের সন্তান থাকলে স্বামী দুইয়ের এক অংশ স্ত্রী চারের এক অংশ
৪. যদি মৃতের পিতা-মাতা অথবা সন্তান না থাকে তাহলে ভাই যা পাবে বোন পাবে তার অর্ধেক

ঙ. পুরুষ নারীর চাইতে দ্বিগুন সম্পদের উত্তরাধিকারী হয়, কারণ সে পরিবারের আর্থিক প্রয়োজনের যোগানদাতা

ইসলাম নারীর ওপরে কোনো আর্থিক বাধ্যবাধকতা এবং অর্থনৈতিক দায়দায়িত্ব নেই যা পুরুষের কাঁধে ন্যাস্ত আছে যে কোনো মেয়ের বিয়ের আগে পর্যন্ত থাকা, খাওয়া, কাপড়-চোপড় এবং অন্যান্য আর্থিক প্রয়োজনের যোগানদাতা তার বাবা অথবা ভাই বিবাহের পরে এসব দায়িত্ব স্বামীর অথবা পুত্রের ইসলাম পুরুষের ওপরই তার পরিবারের আর্থিক প্রয়োজন পূরণের দায়-দায়িত্ব চাপিয়ে দ্বিগুণ অংশ দেয়া হয়েছে

উদাহরণ স্বরুপ এক পুত্র ও এক কন্যা এবং নগদ এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা রেখে এক লোকমারা গেল এখন উত্তরাধিকার বণ্টনে পুত্র মালিক হলো পূর্ণ এক লক্ষ টাকার আর কন্যা পেলো মাত্র পঞ্চাশ হাজার টাকা কিন্তু পরিবারে যাবতীয় আর্থিক প্রয়োজন পূরণের দায় এখন পুত্রের ঘাড়ে অথবা ধরা যাক প্রায় আশি হাজার টাকা ব্যায় করে এখন তার কাছে আছে মাত্র বিশ হাজার টাকা অপরদিকে কন্যা যে পেয়েছে পঞ্চাশ হাজার টাকা তা থেকে কারো জন্য একটি পয়সা খরচ করার কোনো দায়-দায়িত্ব তার ওপরে নেই এবং সে বাধ্যও নয় অর্থাৎ সম্পূর্ণ টাকাটাই তার কাছে গচ্ছিত আছে সে সব প্রয়োজন পূরণে পুত্রকে প্রায়সব টাকাই ব্যায় করে ফেলতে হচেছ

এখন আশি-নব্বই এমন কি পুরোটাই প্রয়োজণে ব্যয় করতে হতে পারে এমন ঝুকির মুখে, এক লক্ষ টাকা আর একটি পয়সারও কোনো দায়-দায়িত্ব নেই এমনভাবে সংরক্ষিত পঞ্চাশ হাজার টাকা-কে কোনটা নিতে চাইবেণ?



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন